২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান এক টুইটবার্তায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মদিনায় নিযুক্ত তৎকালীন উসমানি গভর্নর ফখরুদ্দিন পাশাকে চোর সাব্যস্ত করে নিয়ে লিখেন, ‘আজকের এরদোগানের পূর্বপুরুষরা এমনই, আরব মুসলিমদের সঙ্গে তাদের ইতিহাস এরকম।’
এই টুইটবার্তা প্রকাশের পর তুরস্ক যারপরনাই বিরক্ত হয়, এমনকি প্রেসিডেন্ট এরদোগানও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ফলশ্রুতিতে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার সিটি কর্পোরেশন এক উচিত জবাব দেয়। তারা আঙ্কারায় অবস্থিত আরব আমিরাত দূতাবাসের পাশের দুটো রাস্তার নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘ফখরুদ্দিন পাশা সড়ক’ এবং ‘মদিনা রক্ষাকর্তা সড়ক’।
কেন ফখরুদ্দিন পাশা আলোচনায়!
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময়। তুরস্ক এবং পূর্ব ইউরোপে তখন উসমানি খেলাফত ধ্বংসের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিচ্ছিল ব্রিটিশ মিত্রবাহিনী। আর এদিকে আরবে ব্রিটিশদের দোসর হিসেবে আরবভূমি তাদের হাতে তুলে দিচ্ছিল আরব শাসকগণ। বাকি ছিল শুধু বিশ্বমুসলিমের পবিত্রভূমি মক্কা ও মদিনা।
সেই ষোড়শ শতকের পর থেকে আরবের মক্কা ও মদিনা শহর দুটো ছিল উসমানি খেলাফতের অধীনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হেজাজ অঞ্চলের শেষ গভর্নর ছিলেন ফখরুদ্দিন পাশা।
উসমানি সাম্রাজ্যের শেষ সুলতান তৃতীয় মুহাম্মদ ১৯১৮ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রিটিশ মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। সুলতান আত্মসমর্পণ করার পরও হেজাজের গভর্নর ফখরুদ্দিন পাশা ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকৃতি জানান।
ব্রিটিশ বাহিনী তার কাছে আত্মসর্পণের চিঠি পাঠালে তিনি প্রতিউত্তরে লিখেন, আমি উসমানি সাম্রাজ্যের সুলতানের পক্ষ থেকে মদিনার গভর্নর নিযুক্ত হয়েছি। কেবল তার নির্দেশ পেলেই আমি আত্মসমর্পণ করবো, নয়তো নয়।
আত্মসমর্পণ না করার কারণ
মক্কা ও মদিনা ইসলামি ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক পবিত্র নিদর্শন ধারণ করে রেখেছিল। রাসুল সা. সাহাবা রাদি. এবং অনেক ইতিহাসবিখ্যাত বহু ব্যক্তি ও ঘটনার প্রমাণপঞ্জি লুক্কায়িত ছিল এ দুই শহরে।
প্রায় চার শ বছর ধরে উসমানি খলিফারা মূল্যবান সম্পদে সাজিয়েছিলেন এ শহর। তিনি জানতেন, যদি ব্রিটিশরা এই শহরে ঢুকে পড়ে তাহলে তারা শহরের মূল্যবান সমস্ত সম্পদ চুরি করে ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে দেবে। এর আগে ভারতবর্ষ থেকেও তারা অনেক মূল্যবান সম্পদ চুরি করে নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল। এ কারণে তিনি আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানিয়ে সময়ক্ষেপন করেন।
আগে থেকেই তিনি সবকিছু প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। মক্কা-মদিনার অমূল্য সম্পদ অমুসলিমদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি সেগুলো গোপনে তুরস্কে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
অবশিষ্ট
ফখরুদ্দিন পাশা ১৮৬৮ সালে বর্তমান বুলগেরিয়ার দানিয়ুব নদীর পাশে রুসুকে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র দশ বছর বয়সে তাকে যুদ্ধবিদ্যা শেখার জন্য ওয়ার অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করা হয়। দশ বছর পড়াশোনার পর তিনি উসমানি সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন সেবা দেওয়ার পর ১৯১৬ সালে তিনি হেজাজ অঞ্চলের গভর্নর জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হয়ে আমৃত্যু পবিত্র শহর মক্কা-মদিনা রক্ষার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
১৯১৯ সালে ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণের পর তিনি তুরস্কে ফিরে যান। তুরস্কের বালবেক শহরে ১৯৪৮ সালে এই সাহসী গভর্নর ইন্তেকাল করেন।
Images & information source: Daily Sabah